* জিপিএ নয়, ভর্তি পরীক্ষাই নির্ধারণ করবে ভাগ্য
* মেডিকেল, বুয়েট ও ঢাবিতে এবারও তীব্র হবে ভর্তিযুদ্ধ
* পাবলিকে আসন ৫০ হাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ লাখ ৪০ হাজার
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে। এবার শুরু হচ্ছে আরেক লড়াই-‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ’। শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীদের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। মেধা ও যোগ্যতাই নির্ধারণ করবে কারা পাবেন সুযোগ। ৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিযোগিতায় নামছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি, এর মধ্যে ৫৩টিতে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের সামান্য বেশি। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় মেডিকেল, প্রকৌশল ও শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ব্যানবেইস-এর তথ্য মতে, বর্তমানে ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ১৩ হাজার ৫০০। প্রথম সারির পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়) আসন সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।
এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। এদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লড়াইয়ে অংশ নেবেন। পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন জিপিএ-৪ ও ৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও। জিপিএ-৪ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার এবং জিপিএ-৩.৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিপিএ কেবল শিক্ষার্থীর একাডেমিক সাফল্যের সূচক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মূল নির্ধারক হলো ভর্তি পরীক্ষার ফল। তাই ভালো ফল করলেও সবার জন্য স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত নয়। এবার উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে দেশের জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আসন সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। গত বছর দেখা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়েছেন। জিপিএ-৪ বা ৩.৫ পাওয়া কিছু শিক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দিয়ে সফলভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অর্থাৎ মেধা থাকলেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা নিশ্চিত নয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি, কৌশল ও কিছুটা ভাগ্যও ভর্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, মান ও প্রস্তুতির দিক থেকেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন।
জানা গেছে, এ বছর মেডিকেল, প্রকৌশল ও শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৪০ হাজার আসনের বিপরীতে লড়বেন প্রায় ৪ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে ১২ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় থাকবেন। ফলে এইচএসসিতে ভালো ফল করেও অনেকে নিশ্চিতভাবেই ভর্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন। সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। সংখ্যার হিসাবে সুযোগ অনেক দেখালেও বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন-এত আসনও পূর্ণ হয় না। কারণ, শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে দেশের শীর্ষ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, যেখানে শিক্ষার্থীরা যেতে চায় সেখানে আসন খুবই সীমিত। আর যেখানে আসন বেশি, সেখানে ভর্তির আগ্রহ তুলনামূলক কম।
এবারও তীব্র প্রতিযোগিতা হতে পারে-ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। আগের বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ২০ জন পর্যন্ত আবেদনকারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দেশের ২০টি পাবলিক ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন রয়েছে ২৩ হাজার ১০৪টি। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম জিপিএ ৭, বাণিজ্য শাখায় ৬.৫ এবং মানবিক শাখায় ৬ থাকতে হবে।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই কমিটির বৈঠকে আবেদন শুরুর তারিখ, আবেদন ফি ও পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া, বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েট নিজেদের গুচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেবে। একইভাবে দেশের ছয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও যৌথভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করবে। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, তাদের শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত প্রায় ২ হাজার ২০০টি কলেজে অনার্স পর্যায়ে আসন রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার।
এছাড়া ঢাকার সাত সরকারি কলেজে ২৩ হাজার ৬৩০টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৬৪ হাজার ৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ হাজার ৫৯৩টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারিতে ৫ হাজার ৬০০টি এবং টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ১ হাজার ৪৪০টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প পথও খোলা রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, গত বছর থেকে আমরা ভর্তি পরীক্ষা চালু করেছি। এতে মেধাভিত্তিক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে, ফলে যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি গুণগত শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে কলেজ পর্যায়ে অবকাঠামো ঘাটতি ও শিক্ষক সংকট এখনো বড় চ্যালেঞ্জ-যা দূরীকরণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেছেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা হবে বলে মনে করি না। তবে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে তাদের স্থান ও সুযোগ। তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীকেই উচ্চশিক্ষায় যেতে হবে-এমন ধারণা কোনো দেশেই প্রচলিত নয়। কিন্তু আমাদের দেশে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কড়া নাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ লড়বেন ৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
- আপলোড সময় : ২৪-১০-২০২৫ ০১:০৬:৫১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-১০-২০২৫ ০১:০৬:৫১ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার